জীবদ্দশায় অনেক সুন্দর সুন্দর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি বা শরৎচন্দ্র বাণী তাহার পাঠকদের জন্য করে গিয়েছিলেন, এই নিবন্ধে তেমনি ৫০ টি শ্রেষ্ঠ উক্তি তুলে ধরা হলো। রোম্যান্টিক ট্র্যাজেডি কিংবা সমাজ সংস্কার, আবহমান বাংলার আত্মকথা কিংবা স্যুট-ব্যুট পরা কোনো বিলেতফেরত নায়ক, আত্মত্যাগে নিজেকে বিলীন করে দেয়া নায়িকা কিংবা প্রতিবাদে মাথাচাড়া দেয়া কোনো অরক্ষণীয়া।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এদের সবাইকেই খুব গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিলেন আমাদের কাছে। নারীর প্রতি বিশেষ একধরনের স্থান থাকতো শরৎচন্দ্রের গল্প-উপন্যাসে, তার সমসাময়িক অন্যদের মতো নারীকে তিনি শুধু অবলা বলেই রেখে দেননি, তাদের মুখে বুলি ফুটিয়েছেন, কিছুটা হলেও তাকে দাঁড় করিয়েছেন আজকের সমাজের স্রোতের বিরুদ্ধে।
শরৎচন্দ্র বাণী
“যে লোকে দাবী করতে ভয় পায়, পরের দাবী মেটাতেই তার জীবন কাটে।”
“দীপের যে অংশটা শিখা হইয়া লোকের চোখে পড়ে, তাহার জ্বলার ব্যাপারে কেবল সেইটুকুই তাহার সমস্ত ইতিহাস নহে”
“যেখানে ফেলে যাওয়াই মঙ্গল সেখানে আঁকড়ে থাকাতেই অকল্যাণ।”
“নারীর এক জাতীয় রূপ আছে যাহাকে যৌবনের অপর প্রান্তে না পৌছিয়া পুরুষ কোনো দিন দেখিতে পায় না।”
“এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্তটাই পরিপূর্ণ সত্য। মিথ্যার অস্তিত্ব যদি কোথাও থাকে, তবে সে মনুষ্যের মন ছাড়া আর কোথাও না”
“যেদিন বুঝবে রুপটাও মানুষের ছায়া, মানুষ নয় – সেইদিনই শুধু ভালবাসার সন্ধান পাবে।”
“প্রতিষ্ঠিত নিয়ম পালনের মধ্যে মানুষ যখন একান্ত মগ্ন হইয়া থাকে, চোখের দৃষ্টিও তখন তাঁহার রুদ্ধ হইয়া যায়। সে কোনমতেই দেখিতে পায়না কোনটা ধর্ম, কোনটা অধর্ম”
“রাজার আইন, আদালত, জজ, ম্যাজিস্ট্রেট সমস্ত মাথার উপরে থাকিলেও দরিদ্র প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিঃশব্দে মরিতে হইবে।”
“যে সকল ব্যাপার সচরাচর এবং সহজভাবে ঘটে না এবং যাহার মধ্যে পাপ আছে, তাহা তলাইয়া বুঝিতে না পারিলেও সকলেই নিজের বুদ্ধি অনুসারে একরকম করিয়া বুঝিতে পারে।”
“রাজারা তাদের নামের আগে পিছে কতকগুলি নিরর্থক বাক্য নিয়ে শ্রী জুড়ে তবে অপরকে উচ্চারণ করতে দেয়; নইলে তাদের মর্যাদা নষ্ট হয়।”
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি
“অতীত মুছে ফেলার শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে স্থান পালটানো”
“লড়াই-ঝগড়া বাদাবাদি করে আর যাকেই পাওয়া যাক না, ধর্ম-বস্তুটিকে পাবার জো নেই।”
“কবি যে শুধু সৃষ্টি করে তা নয়, কবি সৃষ্টি রক্ষাও করে। যা স্বভাবতই সুন্দর, তাকে যেমন আরও সুন্দর করে প্রকাশ করা তার একটা কাজ, যা সুন্দর নয়, তাকেও অসুন্দরের হাত থেকে বাঁচিয়ে তোলা তারই আর একটা কাজ”
“শ্রদ্ধা ও স্নেহের অভিনন্দন মন দিয়ে গ্রহণ করতে হয়, তার জবাব দিতে নেই।”
“বড় দুঃখ ছাড়া কোনোদিন কোনো বড় জিনিস লাভ করা যায় না।”
“সত্য পালনের দুঃখ আছে, তাকে আঘাতের মধ্য দিয়ে বরঞ্চ একদিন পাওয়া যেতে পাড়ে কিন্তু বঞ্চনা প্রতারণার মিষ্ট পথ দিয়ে সে কোনদিন আনাগোনা করে না।”
“বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলে দেয়”
“এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবটাই পরিপূর্ণ সত্য। মিথ্যার অস্তিত্ব যদি কোথাও থাকে, তবে সে মনুষ্যের মন ছাড়া আর কোথাও না।”
“বনের পাখির চেয়ে পিঞ্জরের পাখিটাই বেশি ছটফট করে।”
“বিরাগ-বিদ্বেষ নিয়ে বিচার করতে গেলে কেবল একপক্ষই ঠকে না, অন্য পক্ষও ঠকে।”
- আরও পড়ুন:
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
- শরৎচন্দ্রের ছোট গল্প মহেশ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরিচ্ছেদ
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটগল্প রামের সুমতি চতুর্থ ও পঞ্চম
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বিখ্যাত উক্তি
“বুঝি, ছোঁয়াছুঁয়ি-আচার-বিচারের অর্থ নেই, তবুও মেনে চলি; বুঝি, জাতিভেদে মহা অকল্যাণকর। তবুও নিজের আচরণে তাকে প্রকাশ করিনে। বুঝি ও বলি, বিধবা বিবাহ উচিত। তবুও নিজের জীবনে তাকে প্রত্যাহার করি। জানি খদ্দর পরা উচিত, তবু বিলাতি কাপড় পরি। একেই বলি আমি অসত্যাচার”
“ভালকে ভাল, মন্দকে মন্দ বলায় কোন সাহিত্যিক কোন দিন আপত্তি করে না। কিন্তু দুনিয়ায় যা কিছু সত্যই ঘটে নির্বিচারে তাকেই সাহিত্যের উপকরণ করলে সত্য হতে পারে, কিন্তু সত্য-সাহিত্য হয় না”
“ভাল বক্তার কাছে জনতা যুক্তিতর্ক চাহে না, যাহা মন্দ তাহা কেন মন্দ এ খবরে তাহাদের আবশ্যক হয় না, শুধু মন্দ যে কত মন্দ অসংখ্য বিশেষণ যোগে ইহাই শুনিয়া তাহারা চরিতার্থ হইয়া যায়।”
“মনই যদি দেউলে হয়, পুরুতের মন্ত্রকে মহাজন খাড়া করে সুদটা আদায় হতে পারে, কিন্তু আসল তো ডুবল।”
“মনের বার্ধক্য আমি তাকেই বলি…, যে-মন সুমুখের দিকে চাইতে পারে না, যার অবসন্ন, জরাগ্রস্ত মন ভবিষ্যতের সমস্ত আশায় জলাঞ্জলি দিয়ে কেবল অতীতের মধ্যেই বেঁচে থাকতে চায়।”
“অর্থশালী পুরুষের যে কোনো দেশেই বয়সের অজুহাতে বিবাহ আটকায়, বাংলা দেশে ত নয়ই।”
“মন্দ তো ভাল’র শত্রু নয়, ভাল’র শত্রু তাঁর চেয়েও যে আরও ভাল…সে”
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রেমের উক্তি
“মহত্ত জিনিসটা কোথাও ঝাঁকে ঝাঁকে থাকে না। তাকে সন্ধান করে খুঁজে নিতে হয়”
“মানুষ তো দেবতা নয়-সে যে মানুষ! তার দেহ দোষে -গুণে জড়ানো; কিন্তু তাই বলে তো তার দুর্বল মুহূর্তের উত্তেজনাকে তার স্বভাব বলে ধরে নেওয়া চলে না।”
“কোনো বড়ো ফলই বড়ো রকমের দুঃখভোগ ছাড়া পাওয়া যায় না।”
“ক্ষমার ফল কি শুধু অপরাধীই পায়, যে ক্ষমা করে, সে কি কিছুই পায় না?”
“চটুল বাক্যের নানা অলঙ্কার গায়ে আমাদের জড়িয়ে দিয়ে যারা প্রচার করেছিল মাতৃত্বই নারীর চরম সার্থকতা, সমস্ত নারীজাতীকে তারা বঞ্চনা করেছিল।”
“ছেলে বয়সের একটা মস্ত দোষ এই যে, অনেক বই পড়ার অভিমানটা এদের পেয়ে বসে। তাই নিজের লেখার মধ্যে নিজের কিছুই থাকে না, থাকে শুধু মুখস্থ করা পরের কথা। থাকে কারণে অকারণে যেখানে সেখানে খুঁজে দেওয়া বিদ্যার বাচালতা।”
“টিকিয়া থাকাই চরম সার্থকতা নয়, এবং অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে।”
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রোমান্টিক উক্তি
“তিক্ততার মধ্য দিয়ে সংসার ছেড়ে শুধু হতভাগ্য লক্ষ্মীছাড়া জীবনই যাপন করা চলে, কিন্তু বৈরাগ্য সাধন হয় না।”
“মানুষের চামড়ার রঙ তো তার মনুষ্যত্ব মাপকাঠি নয়। কোণ একটা বিশেষ দেশে জন্মানোই তো তার অপরাধ হতে পারে না!… ধর্মমত ভিন্ন হলেই কি মানুষে হীন প্রতিপন্ন হবে? এ কোথাকার বিচার!”
“মানুষের দীর্ঘ-জীবনে তাকে অনেক পা চলতে হয়, দীর্ঘ পথটির কোথাও কাদা, কোথাও পিছল, কোথাও উঁচু-নীচু থাকে, তাই লোকের পদস্থলন হয়; তারা কিন্তু সে কথা বলে না, শুধু পরের কথা বলে। পরের দোষ, পরের লজ্জ্বার কথা চীৎকার করে বলে, সে শুধু আপনার দোষটুকু গোপনে ঠেকে ফেলবার জন্যই।”
“মানুষের দুঃখটাই যদি দুঃখ পাওয়ার শেষ কথা হত, তার মূল্য ছিল না। সে একদিকের ক্ষতি আর একদিকের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে পূর্ণ করে তোলে”
“মানুষের মরণ আমাকে বড় আঘাত করে না, করে মনুষ্যত্বের মরণ দেখিলে।”
“যাকে তাকে গছিয়ে দেওয়ার নামই বিবাহ নয়! মনের মিল না হলে বিবাহ করাই ভুল।”
“যারা অধর্মকে ভয় করে না, লজ্জা ভয় যাদের নেই, প্রাণের ভয়টা যদি তাদের তেমন বেশি থাকে, তা হলে সংসার ছারখার হয়ে যায়।”
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি দেবদাস
যাহাকে ভালোবাসি সে যদি ভালো না বাসে,
এমনকি ঘৃণাও করে তাও বোধ করি সহ্য হয়!
কিন্তু যাহার ভালবাসা পাইয়াছি
বলিয়া বিশ্বাস করেছি, সেইখানে ভুল
ভাঙ্গিয়া যাওয়াটাই সবচেয়ে নিদারুন।
পূর্বের টা ব্যাথা দেয়।
কিন্তু শেষের টা ব্যাথাও দেয়, অপমান ও করে।
জন্মিলে মরিতে হয়,
আকাশে প্রস্তর নিক্ষেপ করিলে,
তাহাকে ভূমিতে পড়িতে হয়,
খুন করিলে ফাঁসিতে যাইতে হয়,
চুরি করিলে কারাগারে যাইতে হয়,
তেমন ভালোবাসিলে কাঁদিতে হয়—
অপরাপরের মতো ইহাও একটি জগতের নিয়ম।”
“যারা মহৎপ্রাণ, তাঁদের যেকোন অবস্থাতেই, পরের বিপদে নিজের বিপদ মনে থাকে না।”
“যাহাকে ভালবাসি, সে যদি ভাল না বাসে, এমন কি ঘৃণাও করে, তাও বোধ করি সহ্য হয়, কিন্তু যাহার ভালবাসা পাইয়াছি বলিয়া বিশ্বাস করিয়াছি, সেইখানে ভুল ভাঙ্গিয়া যাওয়াটাই নিদারুন। পূর্বেরটা ব্যথাই দেয়, কিন্তু শেষেরটা ব্যথাও দেয়, অপমানও করে। আবার এ ব্যথার প্রতিকার নাই, এ অপমানের নালিশ নাই।”
“যাহার প্রাসাদতুল্য অট্টালিকা নদীগর্ভে ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে, সে আর খান কতক ইট বাঁচাইবার জন্য নদীর সহিত কলহ করিতে চাহে না”
“যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জনপদ ভস্মসাৎ করে ফেলে, আয়তনে সে কতটুকু জানো? শহর যখন পোড়ে সে আপনার ইন্ধন আপনি সংগ্রহ করে দগ্ধ হয়। তার ছাই হবার উপকরণ তারই মধ্যে সঞ্চিত থাকে, বিশ্ববিধানের এ নিয়ম কোন রাজশক্তিই কোন দিন ব্যত্যয় করতে পারে না।”
“যে দুঃখকে ভয় … তারই দিয়ে আবার তারও চেয়ে বড় আদর্শ জন্মলাভ করবে; আবার তারও যেদিন কাজ শেষ হবে, মৃতদেহের সার থেকে তার চেয়েও মহত্তর আদর্শের সৃষ্টি হবে, এমনি করেই সংসারে শুভ শুভতরের পায়ে আত্মবিসর্জন দিয়ে আপন ঋণ পরিশোধ করে। এই তো মানুষের মুক্তির পথ।”
“যে ভালবাসে, তাহাকে ঘৃণা করার অপবাদ দেওয়ার মত গুরুতর শাস্তি আর নাই, এ কথা ভালবাসাই বলিয়া দেয়।”
“সমস্ত রমণীর অন্তরে নারী বাস করে কিনা তাহা জোর করিয়া বলা অত্যন্ত দুঃসাহসের কাজ। কিন্তু নারীর চরম সার্থকতা যে মাতৃত্বে এ কথা বোধ করি গলা বড়ো করিয়াই প্রচার করা যায়।”
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি বা শরৎচন্দ্র বাণী গুলো আপনার কেমন লাগলো মন্তব্য করে জানাবেন যদি পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে ৫ স্টার রেটিং দিতে ও শেয়ার করতে ভুলবেন না।